বিশেষ প্রতিনিধি প্রায় এক দশক আগে ঢাকার একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন কাজী আসলাম হোসেন নাসিম। তখন কৌতূহলবশে প্রথমবার ইয়াবা সেবন করেন। এর পর তা হয়ে ওঠে আসক্তি; নিয়মিত সেবন শুরু করেন। একসময় এ ইয়াবা তাঁর কাছে আকর্ষণ হারায়। সেই জায়গা দখল করে ভয়াবহ মাদক অ্যামফিটামিনযুক্ত ক্রিস্টাল মেথ, যা আইস নামে পরিচিত। মাদকাসক্তির কারণে প্রথমে তিনি চাকরি খোয়ান; পরে মাদকের টাকা জোগাতে নিজেই হয়ে ওঠেন কারবারি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাদকসেবীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠা আইস গুলশান-বনানী ও উত্তরা এলাকায় সরবরাহ করতেন নাসিম। দামি মাদক হওয়ায় আসক্ত বেশির ভাগই বিত্তশালী পরিবারের সন্তান বা চাকরিজীবী। তাদের কাছে বিশেষ সতর্কতায় আইস পৌঁছে দিতেন তিনি। যোগাযোগ হতো মোবাইল ফোনে। এর পর ক্রেতা-বিক্রেতার অবস্থানের বদলে সুবিধাজনক কোনো তৃতীয় স্থানে তারা দেখা করতেন। আর তখনই হাতবদল হতো মাদক। সম্প্রতি গ্রেপ্তার এক মাদকসেবীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, গ্রেপ্তার নাসিমের বিরুদ্ধে অন্তত ছয়টি মামলা আছে। প্রতিবার তিনি জামিনে বেরিয়ে ফের জড়িয়ে পড়েন মাদক কারবারে। এবারের অভিযানে তাঁর কাছে ৯ গ্রাম আইস পাওয়া গেছে। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ৪৫ হাজার টাকা। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। ডিএনসি মামলাটির তদন্ত করবে।
ডিএনসি সূত্র জানায়, অচেনা মাদকসেবীর কাছে আইস বা ইয়াবা বিক্রি করতেন না নাসিম। শুধু বিশেষভাবে পরিচিতরাই তাঁর কাছ থেকে মাদক সংগ্রহ করতে পারতেন। একেকজন সাধারণত এক বা আধা গ্রাম আইস একবার সেবনের জন্য কেনেন। কেউ আবার একাধিকবারের জন্যও সংগ্রহ করে রাখতেন। আগে ৬ হাজার টাকায় এক গ্রাম আইস বিক্রি হলেও এখন দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। উত্তরা ও গুলশানে এ মাদকের ক্রেতাদের বড় অংশই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি ৩০-৩৫ বছর বয়সী চাকরিজীবীও আছেন।
ডিএনসি ধানমন্ডি সার্কেলের পরিদর্শক তপন কান্তি শর্মা বলেন, নাসিমকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছে ডিএনসি। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে ডিএনসি। দুটি মামলা করেছে র্যাব ও পুলিশ। এর মধ্যে তিনটি মামলা আইস-সংক্রান্ত। প্রথম মাদক মামলা হয় ২০১৭ সালে। এ পর্যন্ত অনেকবার তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তিনি অপরাধের পথ ছাড়েননি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে আইস সংগ্রহ করেন তিনি। এর পর ঢাকায় এনে অভিজাত এলাকার নিয়মিত ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন। তপন কান্তি শর্মা বলেন, প্রেপ্তার একজনের তথ্যের ভিত্তিতে ১৯ মার্চ মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে অভিযান চালিয়ে নাসিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাঁর প্যান্টের পকেট থেকে আইস উদ্ধার করা হয়েছে। নাসিমের বাড়ি মাদারীপুর সদরের পানিছত্র (কাজীবাড়ি) এলাকায়।তদন্ত সূত্র জানা গেছে, শখের বশে প্রথমে মাদক সেবন করলেও এখন নাসিম পুরো মাত্রায় মাদকাসক্ত। তাঁর জীবন ধারণের ব্যয় ও নেশার খরচ জোগাতে মাদক বিক্রিই এখন তাঁর পেশা।